জিয়াউর রহমানের ৮৫ তম জ’ন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, এক ব্যক্তির ই’চ্ছা অনিচ্ছার উপর দেশের ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্ন-স্বাধ আকাঙ্খা ধুলিস্মাৎ হতে পারেনা। রাষ্ট্র ও সমাজের টেকসই অগ্রগতির জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। জ্ঞানী-গুণী-শিক্ষিত-সম্মানিত ব্যক্তিদের অবজ্ঞা অবহেলা করে কোনো রাষ্ট্র, স’রকার, সমাজ এগুতে পারেনা।
তিনি বলেন, একটি দেশ শুধুমাত্র রাজনীতিবিদদের ইচ্ছে-অনিচ্ছার ঘেরাটোপে আ’টকে থাকবে জিয়াউর রহমান এমন বাংলাদেশ চাননি। জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন দেশের উন্নয়ন কাঠামোয় রাষ্ট্র ও সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণ।
জিয়াউর রহমানের সেই উদ্যোগকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে আগামীতে জনরায়ে বিএনপি পুনরায় স’রকার গঠন করলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিভিন্ন শ্রেণী -পেশা এবং সফল ও গুণী মানুষদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে।
স’রকারে কিভাবে বিভিন্ন শ্রেণী -পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, হাউস অফ লর্ডসের আদলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গঠন করা হবে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ। শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন গোষ্ঠী, শ্রেণী-পেশার নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধি এই পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের প্রতিনিধি হবেন। হাউস অফ লর্ডসের আদলে পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের প্রতিনিধিদের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণী ভূমিকা থাকবে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি রাষ্ট্র কাঠামোয় প্রবাসীদের ভূমিকা নিশ্চিতেরও প্রতিশ্রুতি দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানেই উদ্যোগে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল।
তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস করছেন। এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গঠন করেছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আবারো স’রকার গঠন করলে দেশে প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবাসীরা অবদান রাখছে, বিএনপি স’রকারও প্রবাসীদের অবদান মূ’ল্যায়ন করবে।
বিএনপির ভারপাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রে’সিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে জানতে হলে,বুঝতে হলে অন্য কারো বি’রোধিতা
কিংবা অন্য কারো স’ঙ্গে তাঁর তুলনা করার প্রয়োজন নেই। বরং তিনি তাঁর প্রতিটি কাজের মধ্য দিয়েই স্ব-মহিমায় ভাস্বর। তিনি বলেন, স্বাধীনতা অর্জন কিংবা মাতৃভুমির স্বাধীনতা রক্ষা, জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলঘ্নেই, জনগণ জিয়াউর রহমানকে পেয়েছিলো ত্রাতার ভূমিকায়।
তারেক রহমান বলেন, মুক্তিযু’দ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম প্রে’সিডেন্ট জিয়াউর রহমান, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন। অপ্রস্তুত ও দিকনির্দেশনাহীন স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে শহীদ জিয়ার সেই স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল তূর্যধ্বনির মতো। শহীদ জিয়া শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি জনগণকে স’ঙ্গে নিয়ে অ’স্ত্র হাতে যু’দ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, এ কারণেই বাংলাদেশের পক্ষের শ’ক্তির কাছে, গণতন্ত্রের পক্ষের শ’ক্তির কাছে, জিয়াউর রহমান একটি সাহসের নাম।
একটি প্রেরণার নাম। জাতীয়তাবা’দী শ’ক্তির কাছে জিয়াউর রহমান মানে মুক্তিযু’দ্ধের বাংলাদেশ, গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে
জিয়াউর রহমান মানে মুক্তিযু’দ্ধের মূ’লমন্ত্র সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার’।
স্বাধীনতা পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনামলের পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ স’রকার বি’রোধী দল ও মতের প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে হ’ত্যা করেছিল, পেশাদার খু’নি রক্ষীবাহিনীর জ’ন্ম দিয়েছিলো, রক্ষীবাহিনীর খু’ন – অ’পরাধের বিচার বন্ধে সংবিধানে প্রথম ইনডেমনিটি জারি করেছিল, একদলীয় কু’খ্যাত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল , সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিল । তারা দেশে দু’র্নীতি, স’ন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের জ’ন্ম দিয়েছিলো।
অথচ এর বিপরীতে,স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রে’সিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃ প্রবর্তন করেছেন। আওয়ামী লীগকে দেশে নিজ নামে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। স’ন্ত্রাস ও নৈরাজ্য থেকে বের করে এনে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তারেক রহমান বলেন, জনগণ জানতে চায় স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে আওয়ামী লিগ কেন ব্যর্থ হলো অপরদিকে শহীদ জিয়া কিভাবে সফল হলেন ?
তারেক রহমান আরো বলেন, এ প্রশ্নের জবাবে যারা বলেন স্বাধীনতার পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি তারা ঠিক বলছেন না। কারণ স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগের শাসনামল এবং জিয়াউর রহমানের শাসনামল, এই দুই শাসনামলের মধ্যে
সময়ের ব্যবধান খুব বেশি নয়। সুতরাং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে কারো ব্য’র্থতার বা অযোগ্যতার দায় এড়ানো সম্ভব নয়।
বরং বাস্তবতা হলো, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য লড়াই করা সাহসী মানুষগুলো যাদের অনেকেরই হয়তো তখনো যু’দ্ধের ক্ষ’ত শুকায়নি। সেইসব দেশপ্রে’মিক মুক্তিযোদ্ধারা দেখছিলো, তাদের তাজা র’ক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত সদ্য স্বাধীন দেশটির ক্ষ’মতায় যারা বসেছিল তাদের শাসন নীতি ছিল পাকিস্তানিদের মত। ক্ষ’মতায় গিয়েই তারা গণতন্ত্র ভু’লে গিয়েছিলো, ভু’লে গিয়েছিলো মানুষের স্বাধীনতার কথা।
বিএনপি’র ভারপ্রা’প্ত চেয়ারম্যান বলেন, মানুষ খেয়ে না খেয়ে একবুক র’ক্ত দিয়ে বাংলাদেশটা কেন স্বাধীন করেছিল, স্বাধীনতা পরবর্তী ক্ষ’মতাসীনরা সেটি বোঝার চেষ্টা করেনি বরং বিতাড়িত পাকিস্তানিদের মতোই তারা খু’ন গুম আর জু’লুম নি’র্যাতনের মাধ্যমে জনগণকে দাবিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছিল।
সাম্য-মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সু-বিচার …মুক্তিযু’দ্ধের এই মূ’লমন্ত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লিগ স’রকারের শাসন-প্রশাসন চলছিলো বিতাড়িত পাকিস্তানী কায়দায়। অপরদিকে মুক্তিযু’দ্ধের দিনগু’লিতে অ’স্ত্র হাতে সম্মুখ সম’রে নেতৃত্ব দেয়া জিয়াউর রহমান। তিনি জনগণের চাওয়া পাওয়া বুঝতে পেরেছিলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সবাইকে বাঙালি বানাতে গিয়ে অন্য ভাষা ও গোষ্ঠীর মানুষের মনে আওয়ামী লীগ শুরুতেই অবিশ্বাস ও বি’রোধের জ’ন্ম দিয়েছিলো। অপরদিকে স্বাধীন বাংলাদেশে ভাষা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতার ঘোষক দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে’র দর্শন।
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ক্ষ’মতাসীনদের দু’র্নীতি, ব্যাংক ডাকাতি এবং বেপরোয়া লু’টপাটে বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছিলো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল একটি কার্যকর, কল্যাণ ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে।
বিএনপি’র ভারপ্রা’প্ত চেয়ারম্যান একটি বি’ষয় সবাইকে স্মরণ রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ক্ষ’মতাসীন স’রকার জনগণের বি’রুদ্ধে অ’স্ত্র ধরেছিলো অপরদিকে জনগণ স’রকারের বি’রুদ্ধে অ’স্ত্র হাতে নিয়েছিল। তবে সেই জনগণই জিয়াউর রহমানের শাসনামলে খাল খনন কর্মসূচি সফল করতে ‘কোদাল’ হাতে তুলে নিয়েছিল।
কারণ, জিয়াউর রহমান জনগণকে বিশ্বাস করেছিলেন, জনগণও জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করেছিল। জনগণকে স’ঙ্গে নিয়ে অ’স্ত্র হাতে যে দেশটি তিনি স্বাধীন করেছিলেন আবার সে দেশটি গড়তে জনগনের স’ঙ্গে ‘কোদাল’ হাতে তুলে নিয়েছিলেন।
জিয়াউর রহমান এইসব গণমুখী উদ্যোগের অর্থনৈতিক সুফলও পেয়েছিলো দেশ । ১৯৭৭-৭৮ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়েছিল। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে যেখানে দুর্ভিক্ষে প্রায় ১০ লক্ষ লোক মা’রা গিয়েছিলো সেখানে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে খাদ্যভাব দূরে থাকুক, আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ বিদেশে চাল রপ্তানি করতে স’ক্ষম হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের উদ্যোগেই বিদেশে বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানির দ্বার খুলেছিলো।
তারেক রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন এমন একটি বাংলাদেশ যে দেশটি হবে গণতান্ত্রিক। যে দেশে ‘চির উন্নত মমশির’ নিয়ে
বেড়ে উঠবে লক্ষ -কোটি ‘আবরার’ । যে দেশে শ’ক্তিমান সে’নাবা’হিনী থাকবে । যে দেশের নাগরিকরা নিজ দেশে পরাধীন থাকবেনা। যে দেশের নাগরিকরা সী’মান্তে ফেলানী হয়ে ঝুলে থাকবেনা। যে দেশে কেউ চাইলেই রো’হিঙ্গাদের ঠেলে পাঠানোর সাহস করবেনা। ঠিক তেমনি একটি বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষকের নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল।
তারেক রহমান বলেন, সেই বাংলাদেশের আজ একি অবস্থা। দেশটি এখন স্বা’মী-স্ত্রীর কূটনীতির গ্যাড়াকলে। দেশ এখন জি’ম্মি হয়ে আছে
গণতন্ত্র বিনাশী দুষ্ট চ’ক্রের হাতে। ‘ভোট ডাকাত’ / ‘ব্যাংক ডাকাত’দের হাতে। রাষ্ট্র ও স’রকারে এখন দেশের জ্ঞানী-গুণী শুভবোধ সম্পন্ন মানুষের অংশগ্রহণ নেই।
তিনি বলেন, রাজনীতি, শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য জীবনের নানাক্ষেত্রে দেশে- বিদেশে যারা অনন্য, এমন গুণী ও সফল মানুষদের সাফল্যের
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দু’টি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। একটি ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অপরটি ‘একুশে পদক’ ।
এই দু’টি পুরস্কারই প্রবর্তন করেছিলেন জিয়াউর রহমান।
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় এসেছিলেন তখন রাষ্ট্র ও স’রকারে
মুক্তিযু’দ্ধের মূ’লমন্ত্র ‘সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার’ ছিল অনুপস্থিত। বর্তমানেও, নিশিরাতের এই স’রকারের আমলে
মহান মুক্তিযু’দ্ধের একটি মূ’ল্যবোধও আর অবশিষ্ট নেই. এই স’রকার ১১ কোটি মানুষের ভোটাধিকার নিয়ে তামাশা করছে।
এ তামাশা চলতে পারেনা, চলতে দেয়া যায়না। তাই মানুষকে মুক্তি দিতে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে আরেকটি বিপ্লব প্রয়োজন। আরেকটি গণ গণঅভুথান এখন সময়ের দাবি।
তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি দেশ বাঁচা-মানুষ বাঁচাও স্লোগানে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান।