আছমা খাতুন (২৩) ও জাহাঙ্গীর মিয়া (১৮)। সহোদর ভাই-বোন। তাদের জীবনটাই কা’টছে হা’তে-পা’য়ে শি’ক’ল বাঁ’ধা অবস্থায়। অ’সুস্থ হলেও অর্থাভাবে মিলছে না তাদের চি’কিৎসা। ভাঙা ঘরের একটি খুঁ’টিতে আছমার বা পা লো’হার শি’ক’লে তা’লা দেয়া। আর খানিকটা দূরেই একটি গা’ছের স’ঙ্গে লো’হার শি’ক’লে জাহাঙ্গীরের হাত বাঁ”ধা। রাস্তার পাশ দিয়ে লো’কজন যাওয়ার সময় আকার-ইঙ্গিতে শি’কল খুলে দেয়ার আকুতি জানান তারা।
শীত কিংবা গ্রীষ্ম। দিন বা রাত। ঘরের খুঁ’টি ও গা’ছের স’ঙ্গে শি’ক’ল ব’ন্দি অবস্থায় বছরের পর বছর জীবন কা’টছে মা’নসিক ভা’রসাম্যহীন এ ভাই-বোনের। রোদে পু’ড়ে বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে-না খেয়ে এভাবেই তাদের দিন যাচ্ছে বছরের পর বছর!
আছমা ও জাহাঙ্গীর কি’শোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজে’লার আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের দ’রিদ্র দিনমজুর ফজলু মিয়ার দুই স’ন্তান। বৃ’দ্ধ বাবা দিন মজুরি করে কোনোভাবে সংসার চালান।
আর মা তো ব’য়সের ভারে ন্যূজ। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। দুই স’ন্তানের চি’কিৎসা করানো তাদের পক্ষে অ’সম্ভব। তাই ছে’লে-মে’য়ে যাতে হা’রিয়ে না যায়, কিংবা কারও ক্ষ’তি করতে না পারে এ জন্য শি’কলে ব’ন্দি করে রেখেছেন। মে’য়েকে ৫ বছর এবং ছে’লেকে ২ বছর ধরে বাড়ির উঠানে গাছ ও ঘরের খুঁটির স’ঙ্গে বেঁ’ধে রাখা হয়েছে।
শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শি’কল ব’ন্দি আছমা খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। লো’কজনের ভিড় দেখে সে উ’ত্তেজিত হয়ে উঠছে। খানিক দূরে গাছের স’ঙ্গে শি’কল বাঁ’ধা জাহাঙ্গীর মাটিতে শু’য়ে আছে।
এ সময় সুফিয়া কামালের ‘তুলি দুই হা’ত, করি মোনাজাত’ কবিতাটি পড়ে শুনান আছমা। তার আ’কুতি, ‘তাকে এভাবে আ’টকে রাখা হয়েছে। মশা কা’মড়ায়। চি’কিৎসা দিলে সে ভালো হয়ে যাবে।’
তাদের মা ফজিলা খাতুন জানান, চার মে’য়ে ও এক ছে’লের মধ্যে ৩ মে’য়ের বিয়ে হয়ে গেছে। প’রিবারে কিছুটা স’চ্ছলতার আশায় মাত্র ১৪ বছর ব’য়সে গার্মেন্টসে কাজ নেন আছমা। কিছু টাকা জমা রাখেন স্থানীয় এক ব্য’ক্তির কাছে। কিন্তু ওই ব্য’ক্তি টাকা নিয়ে উ’ধাও হয়ে গেলে মা’নসিক ভা’রসাম্য হয়ে পড়েন তিনি।
ভাবেই তার ১০ বছর কাটে। তবে গত চার বছর ধরে তাকে শি’কলে আ’টকে রাখা হয়। এরই মধ্যে বোনের সহযাত্রী হন ভাই জাহাঙ্গীরও। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসা করেছিলেন। প্রেমে পড়ে তিনিও মা’নসিক ভা’রসাম্য হা’রান। তাকেও শি’কলে বেঁ’ধে রাখা হয়েছে দুই বছর ধরে। টাকার অভাবে মিলছে না চি’কিৎসা।
চি’কিৎসা আর সেবা পেয়ে তারা স্বাভাবিক জী’বনে ফিরতে পারবেন বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এলাকার সমাজকর্মী রাজিব কুমার জানান, জাহাঙ্গীর ও আছমার এ অবস্থা দেখে দু’দিন আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন।
তিনি জানান, বাবা ফজলু মিয়া দিন মজুন। ব’য়সের ভারে এখন আর কাজ করতে পারেন না। মা চোখে দেখেন না। তাদের কোন জমিজমা নেই। একটি ছোট্ট ঘর। এতে কোনো আসবাবপত্র নেই। এমনিতেই কঠিন দারিদ্রতার মধ্যে তাদের দিন কাটছে। তার ও’পর মা’নসিক ভা’রসাম্যহীন দুই স’ন্তানকে নিয়ে বি’পাকে তারা।
আশপাশের লোকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাইরেই তাদের আ’টকে রাখা হয়। দিন-রাত এখানেই থাকেন ভাই-বোন।
বি’ষয়টি অ’মানবিক ও মা’নবাধিকারের চ’রম ল’ঙ্ঘন উল্লেখ করেছেন কটিয়াদী উপজে’লা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্ম’দ মুশতাকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি গতকালই বি’ষয়টি জেনেছি। তাদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
কি’শোরগঞ্জ জে’লা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘কোনো অ’বস্থাতেই মা’নসিক প্র’তিব’ন্ধীকে শি’কলে বেঁ’ধে রাখা যাবে না। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। তাদের চি’কিৎসাসহ যাবতীয় বি’ষয়ে সহযোগিতা করা হবে। পরিবারকে প্র’তিব’ন্ধী ভাতা দেয়াসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।’